কুরআন-সুন্নাহর আলোকে নারীর মর্যাদা ও অধিকার বাস্তবায়ন

ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ মহিলা শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটি ২৬ বার উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র কুরআনে ‘নিসা’ তথা মহিলা শিরোনামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াতও হাদীসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।

নারী শিক্ষা :

নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে এসেছে, তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করা ও উত্তরণ আচরণ করার শিক্ষা দাও (নিসা-১৯)। নবীজী (স) বলেন, ইলম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (ইবনে মাজাহ)। তাই হাদীস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০ যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

নারীর অধিকার শিক্ষা :

একইভাবে অধ্যাত্মিক মহিমা অর্জনের ক্ষেত্রেও নারীর কর্তব্য রয়েছে। কুরআনে এসেছে- ‘এ কথা সুনিশ্চিত, যে পুরুষ ও নারী মুসলিম মুমিন, হুকুমের অনুগত, সত্যবাদী, সবরকারী, আল্লাহর সামনে বিনিত, সাদকা দানকারী, রোজা পালনকারী, নিজেদের সম্ভ্রমের হেফাজতকারী এবং আল্লাহকে বেশী বেশি স্মরণকারী, আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। (আহজাব-৩৫)

মা হিসেবে নারীর সম্মান :

ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। নবীজি (স) বলেন, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, নবীজী (স) মায়ের খেদমতের কথা তিন বার বলেছেন এবং পিতার কথা বলেছেন একবার। মায়ের খেদমত করেই হযরত ওয়াইস করনি (রা) নবীজি (স) এর কাছে না এসেও জুব্বা মুবারক পেয়েছেন এবং নবীজী উমর (রা) কে বলেছেন হে উমার! ওয়াইস করণির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিয়ো।

কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান :


নবীজী (স) বলেছেন, মেয়ে শিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক। হাদীসে এসেছে, যার তিনটি বা দুটি বা একটি কন্যা সন্তান থাকবে, আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।

বোন হিসেবে নারীর সম্মান :

নবীজী (স) বলেন, কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোন কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দিবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দিবে। হাদীসে এসেছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।

স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান :

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে, তারা তোমাদের পোষাক, আর তোমরা তাদের পোষাক (বাকারা ১৮৭)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে নবীজী (স) বলেন, উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক (মুসলিম)। নবীজী (স) আরোও বলেন, তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম (তিরমিযি)। আল্লাহ বলেন, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করো (নিসা-১৯)। কুরআনে আরো এসেছে, নারীদের উপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের উপর নারীর অধিকার (বাকারা ২২৮)

বিধবা নারীর অধিকার ও সম্মান :

বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী (স) বলেছেন, যারা বিধবা নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী। (বুখারী)

নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ব্যক্তিত্বের প্রমাণ :

নবীজী (স) এর একটি হাদীসে এসেছে, নারীকে সম্মান করার পরিমাপের ওপর ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনটি বিষয় নবীজীর জীবন লক্ষণীয় ছিল। ১. নামাজের প্রতি অনুরাগ, ২. ফুলের প্রতি ভালোবাসা, ৩. নারীর প্রতি সম্মান। (বুখারী)

কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত বিখ্যাত নারীগণ :

পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অনেক বিখ্যাত নারীর উল্লেখ আছে, তাঁরা নিজ নিজ অবস্থানে সেরা ছিলেন। যেমন : বিশ্ব মানব জাতির মা হাওয়া (আ), আদম কন্যা আকলিমা, হযরত ইব্রাহীম (আ) এর পত্নী সারা, ইসমাইল (আ) এর মাতা হাজারা, মিশরপতির স্ত্রী জুলায়খা, ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া, আইয়ুব (আ) এর স্ত্রী বিবি রহিমা, ঈসা (আ) এর মাতা বিবি মরিয়াম, নূর নবীজির মাতা আমেনা ও দুধমাতা হালিমা সাদিয়া, উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা), হাফসা, আয়িশা, মারিয়া (রা) সহ নবী পত্নগণ, নবী নন্দিনী রুকাইয়া, জয়নব, কুলসুম ও ফাতিমা (রা), আবু বকরের কণ্যা আসমা, ইসলামের প্রথম শহীদ সুমাইয়া (রা)সহ আরোও অনেকজন।

মায়েদের ত্যাগ ও ভালোবাসা ছাড়া মানবীয় প্রতিভার বিকাশ ও সমাজের স্থায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়, মায়েরাই সমাজের প্রধান ভিত্তি পরিবারের প্রশান্তির উৎস।

আমাদের কার্যক্রমসমূহঃ

পবিত্র কুরআন বিশুদ্ধ পঠন এবং অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনবিষয়ভিত্তিক সহীহ হাদিস মুখস্তকরণ এবং অর্থ জেনে আমলে বাস্তবায়ন 
  
ইসলামী আখলাক ভিত্তিক ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গঠনইসলামি উচ্চতর গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ বিষয়ভিত্তিক বই প্রকাশ
  
কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক দৈনন্দিন 'আমালিয়াতমাদক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে তাযকিয়া ফাউন্ডেশন
  
তরুণদের পথ প্রদর্শনে তাযকিয়া ফাউন্ডেশনআত্মশুদ্ধির লক্ষ্যে তা'লীম ও তাওয়াজ্জুহ্‌ প্রদান
  
খিদমতে খালক বা মানবতার সেবাইসলামের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিবস উপলক্ষে মাহফিলের আয়োজন

 

image
তাযকিয়া ফাউন্ডেশন একটি শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারমূলক অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। যা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে শুধুমাত্র আল্লাহ রব্বুল আ‘লামিনের সন্তুষ্টি এবং তাঁর প্রিয় হাবীব এর নৈকট্য অর্জন করার লক্ষ্যে পরিচালিত।

লাইভ মাহফিলসমূহ

পডক্যাস্ট

সচরাচর জিজ্ঞাসা

যোগাযোগ

ডোনেট

মাসায়িল

কমিউনিটি

ফটো গ্যালারী

সাবস্ক্রাইব করুন
mail-image

copywrite-image

Tazkia Foundation 2025

Terms and ConditionsReturn and RefundPrivacy Policy