ত্বরিকা কি এবং তা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা
ত্বরিকা শব্দের অর্থ হলো- পথ, পদ্ধতি, উপায় ইত্যাদি। শায়েখে কামিলের তত্ত্বাবধানে, আল্লাহ প্রাপ্তির পথে, অনুসন্ধানী বান্দার বিভিন্ন অবস্থান ও স্তর (সবক) অতিক্রম করার বিশেষ পদ্ধতিকে ত্বরিকা বলে।
আল্লাহ তায়ালা অসীম এবং তাঁর পক্ষ থেকে ইলম ও ব্যাপক। ইলম অর্জনের পন্থাও ব্যাপক। সীমাবদ্ধতা আল্লাহ তায়ালার শানের খেলাফ। আল্লাহ তায়ালা বিভিন্নভাবে তার বান্দাদেরকে উপকারী ইলম দান করেন। বিভিন্ন আওলিয়ায়ে কামিলীন সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করে তাঁর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ত্বরিকা লাভ করেছেন। যদিও মানুষের মাঝে কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া এবং মুজাদ্দিদিয়া এ চারটি ত্বরিকা বহুল প্রচলিত।
মহান আল্লাহ বলেন:
وَٱلَّذِينَ جَـٰهَدُوا۟ فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلْمُحْسِنِينَ
অর্থাৎ যারা আমাকে পাওয়ার পথে প্রচেষ্টা (রিয়াযত ও সাধনা) করে আমি অবশ্যই তাদের জন্য আমার পথসমূহের (ত্বরিকাসমূহের) সন্ধান দিয়ে দিব এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ নেককারদের সাথে আছেন। (সূরাহ আনকাবুত : আয়াত ৬৯)
ত্বরিকা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা:
তাযকিয়া-ই-নফস বা আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জনের উদ্দেশ্যে একজন হক্কানী শায়েখের কাছে বাই'য়াত গ্রহণ করে ত্বরিকা অনুসরণ করা অপরিহার্য, যে পদ্ধতি বা ধারা রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত চলমান রয়েছে। যে সকল কারণে ত্বরিকা গ্রহণ করা অপরিহার্য সেগুলো হলোঃ
ক্বালব থেকে শয়তানী ওয়াসওয়াসা দূর করার লক্ষ্যে
ক্বালব থেকে কু-রিপুসমূহ দূর করার লক্ষ্যে
ক্বালবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার ইসমে জাতের যিকির জারী করার লক্ষ্যে
নফসকে দমন করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করার জন্য
ক্বালবের মাঝে যাবতীয় উত্তম স্বভাব অর্জন করার লক্ষ্যে
ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করে পরকালীন চূড়ান্ত সফলতা লাভ করার লক্ষ্যে
ত্বরিকায়ে মদীনার জামা‘য়াত
ত্বরিকায়ে মদীনার জামা‘য়াত চার ত্বরিকার সমন্বয়ে আরো উন্নত পদ্ধতির একটি তাওয়াজ্জুহ ভিত্তিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ত্বরিকা। যা ইলমে মা‘রেফাত তথা আল্লাহ ও রাসূল ﷺ প্রাপ্তির জন্য এক অনন্য মাধ্যম। এটা আধুনিক ব্যস্ততার যুগের মানুষদের জন্য স্বল্প সময়ে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে খুবই সহায়ক। এ ত্বরিকায় লত্বীফার অবস্থান চিশতিয়া ও ক্বাদেরিয়া ত্বরিকার ন্যায়, আর তাওয়াজ্জুহ্ এর সিস্টেম হচ্ছে নকশেবন্দিয়া ও মুজাদ্দিদিয়া ত্বরিকার ন্যায়।
ত্বরিকায়ে মদীনার জামা‘য়াতের বৈশিষ্ট্য
ত্বরীক্বা মদীনার জামা‘য়াত হচ্ছে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা`য়ালার পক্ষ থেকে তাঁর অতুলনীয় সুমহান হাবীব ﷺ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত এক বিশেষ উপহার যা এই আধুনিক পাপ পঙ্কিলতাপূর্ণ সমাজে একজন মানুষের তাযকিয়া অর্জনের লক্ষ্যে এক মহামূল্যবান চলার পথ।
এ ত্বরিকায় মারেফাত হাসিল করতে বছরকে বছর তাওয়াজ্জুহ বিহীন মৌখিক যিকির করার সবক প্রদান করা হয় না।
ত্বরিকাতের সবকসমূহ (ক্বালবী যিকির থেকে বাক্বা বিল্লাহ্) প্রাপ্ত হতে মৌখিক যিকির করার প্রয়োজন হয় না।
এ ত্বরিকায় ইলমে মারেফাত অর্জিত হয় শায়খের ফায়েয ও তাওয়াজ্জুহের মাধ্যমে।
শুরুতেই শায়েখ সালেকদেরকে ক্বালব থেকে তাওয়াজ্জুহ্ প্রদান করেন।
শায়খের নিকট থেকে প্রথম তাওয়াজ্জুহ্ গ্রহণে ক্বালবসহ অন্যান্য লত্বীফাসমূহে যিকির জারী হয়।
শায়খের তাওয়াজ্জুহের মাধ্যমে যিয়ারাতুল আরওয়াহ, সায়েরে আফাক্ব এবং সায়েরে আনফুসী, সায়ের ‘আনিল্লাহ্, সয়ের ফিল্লা্হ্, ফানাফিল্লাহ্ ও বাক্বা বিল্লাহ্ হাসিল হয়।
শায়খের তাওয়াজ্জুহের মাধ্যমে যিয়ারাতুল আরওয়াহ, সায়েরে আফাক্ব এবং সায়েরে আনফুসী, সায়ের ‘আনিল্লাহ্, সয়ের ফিল্লা্হ্, ফানাফিল্লাহ্ ও বাক্বা বিল্লাহ্ হাসিল হয়।
ত্বরিকায়ে মদীনার জামা‘য়াতের সবকসমূহ
প্রতিটি হক্কানী ত্বরিকার মতই ত্বরিকা মদীনার জামা‘য়াতেরও স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিশেষ সবক এবং মাকামাত রয়েছে। একনজরে/সংক্ষেপে সবকগুলোর নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:
যিকরুল লাত্বাইফ (পাঁচ লত্বিফা তথা ক্বালব, রূহ, সির, খফী ও আখফা এর মাঝে যিকির)
আরবা‘য়া ‘আনাছির (চার লত্বিফা তথা আব, আতশ, খাক, বাদ এর মাঝে যিকির)
সুলত্বানুল আযকার (পা থেকে মাথা পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিটি সেল ও লোম আল্লাহর যিকির অনুভব করা ও কানে শ্রবনকরা)
আনওয়ারুল লাত্বাইফ (লত্বীফাসমূহে নূর লাভ করা যার মাধ্যমে কাশফ অর্জিত হয়)
যিয়ারাতুল আরওয়াহ্ (আম্বিয়া-মুরসালীন, সালাফ সালিহীন ও বুজুর্গানে দ্বীনগণের সাথে রূহানী সাক্ষাত)
সায়েরে আনফুসী (পৃথিবী পৃষ্ঠে রূহানীভাবে ভ্রমণ করা)
সায়েরে আফাক্বী (উর্ধ্বজগত ভ্রমণ করা)
ফানা ফিল্লাহ্ (রূহানীভাবে আল্লাহর নূরের মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়া)
বাক্বা বিল্লাহ্ (রূহানীভাবে আল্লাহর নূরের মাঝে অবস্থান করা)
উপরে উল্লেখিত সবকসমূহের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন সুন্নাহ্-এর আলোকে বিস্তারিত জানতে চাইলে "শয়তানের মোকাবেলা এবং আল্লাহ প্রাপ্তির উপায়" কিতাবখানা পাঠ করুন।
ত্বরিকা গ্রহণের উপকারিতা
ত্বরিকা গ্রহণের অপরিসীম গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তার কারণে যুগে যুগে পৃথিবী বিখ্যাত মাশায়েখ এবং ‘উলামায়ে কিরামগণ ‘ইলমে মা‘রিফাতের অধিকারী হক্কানী শায়খের অনুসন্ধান করে তাঁদের অমূল্য সান্নিধ্য লাভ করে নিজেদের নফসকে পরিশুদ্ধ করেছেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে চূড়ান্ত সফলতা অর্জনে সচেষ্ট হয়েছেন। ত্বরিকা গ্রহণ করলে যেসকল উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো হলোঃ
শয়ত্বানের ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
ইবাদাতে বিনয় ও একাগ্রতা হাসিল হয়
কলবে সালীম, নফসে মুত্বমাইন্নাহ্ ও হাক্কুল ইয়াকীন অর্জিত হয়
হাকীকী ‘ইলম অর্জিত হয়ে সঠিক ‘আকীদা এবং আমল সম্পর্কে জানা যায়
আল্লাহ্ ও রসূল ﷺ এর নূরানী দিদার ও কুরবাত লাভ করা যায়
আল্লাহ তা‘য়ালা আমাদেরকে হক্কানী শায়খের নিকট বাইয়াত হয়ে তাঁর নিকট থেকে ফায়েয গ্রহণ করে ‘ইলমে মা‘রেফাত হাসিলের মাধ্যমে তাঁর প্রিয় বান্দা এবং তাঁর হাবীব ﷺ এর প্রিয় উম্মত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন! বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালীন!!