হিফযুল হাদিস ও তা আমলের বাস্তবায়ন
বিষয়ভিত্তিক হাদীস মুখস্তকরণ :
বিদায় হজ্বের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (স) কুরআন এবং সুন্নাহকে আঁকড়ে থাকার উপর জোর দিয়েছেন। যতদিন মুসলিম জাতি কুরআন এবং সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরেছিল, ততদিন দিকে দিকে তাঁদের বিজয়ের পতাকা পতপত করে উড়েছিল। যখনই তাঁদের মধ্যে এ দু‘টির প্রতি অবহেলা এসেছে, তখনই দিকে দিকে দেশে দেশে পরাজয়ের গ্লানি তাঁদেরকে অক্টোপাসের মতো চারদিক থেকে ঝাপটে ধরছে। পরিবার, সংসার, সমাজ ও রাষ্ট্রে দেখা দিয়েছে অভূতপূর্ব সমস্যা আর হতাশা। এক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে না পেতেই তৈরি হচ্ছে নতুন সমস্যা। জীবন যেন কুজ হয়ে নুইয়ে পড়া বৃদ্ধের আকার ধারণ করেছে।
এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথই হলো রাসূলুল্লাহ (স) এর দেখানো পথ, কথা ও কাজের অনুসরণ। তা যত ছোট আর সামান্যই হোক, রাসূলুল্লাহ (স) এর ছোট একটি সুন্নাহও বড় বড় বিপদ থেকে আমাদের ক্ষা করতে পারে।
কুআরন শিক্ষা ও অন্যকে শিখানোর উপর জোর দিয়ে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য হাদিস শরীফও। ঠিক তেমনিভাবে হাদিস শরীফ আয়ত্ব করা এবং তা অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়ার প্রতিও অত্যন্ত জোর দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশর-৭)
অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- রাসূল (স) নিজ থেকে মনগড়া কিছু বলেন না। কাজেই রাসূলের বাণী, কর্ম, সম্মতি এবং পাশাপাশি সাহাবা কেরামের কথা কাজ এবং ঐক্যমত্ত উম্মতের জন্য অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয়।
তাছাড়া রাসূল (স) এর সুন্নাহতে রয়েছে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের এক বিশাল ভান্ডার। যা প্রতিটি মুমিনের জন্য কল্যাণকর।
হযরত যায়েত বিন ছাবিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘য়ালা ঐ ব্যক্তির কল্যাণ করেন, যে ব্যক্তি আমার কাছ থেকে একটি হাদিস শোনে এবং তা মনে রাখে, যাতে সে অন্যের নিকট তা পৌঁছে দিতে পারে। হয়তো সে এমন একজনের কাছে পৌঁছে দেয় যে তার চেয়ে এর মর্যাদা সম্পর্কে বেশি অবগত। সে এমন জ্ঞান পৌঁছে দিচ্ছে যার সম্পর্কে সে নিজেও হয়তো তত অবগত নয়। (তিরমিজি-২৬৫৬, আবু দাউদ-৩৬৬০, ইবনে মাজাহ-২৩০)
রাসূল (স) তাঁর কথাগুলো পরবর্তী মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য বিদায় হজ্বের ভাষণেও বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলে যুগে যুগে মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ইমাম এবং ইসলামী বিন্তাবিদগণ নিজেরা যেমন হাদিস সংগ্রহ করেছেন, অন্যেরা যাতে সেসব হাদিস জানতে ও শিখতে পারে সেজন্য অক্লান্ত পরিশ্রমও করে গেছেন।
দৈনন্দিন জীবনের নানান ব্যস্ততা এবং জীবন জটিলতার মাঝে হয়তো সেভাবে লক্ষ লক্ষ হাদিস মুখস্ত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা। তাই রাসূল (স) অন্তত চল্লিশটি হাদিস মুখস্ত রাখা এবং তা প্রচার করার ব্যাপারে সাহাবাগণকে উৎসাহিত করেছেন। কমপক্ষে চল্লিশটি হাদিস মুখস্ত রাখা এবং তা প্রচার করার জন্য রয়েছে অকল্পনীয় ফযিলত।
উহাদের কতিপয় হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন- আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি দ্বীনের বিষয় চল্লিশটি হাদিস মুখস্ত করবে কিয়ামতের দিন তাকে ফকীহ আলেম হিসেবে উঠানো হবে। (মুজামু ইবনে আসাকির)
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে- চল্লিশ হাদিস মুখস্তকারীর জন্য রসূলুল্লাহ (স) সুপারিশকারী ও সাক্ষাৎদাতা হবেন। (বায়হাকী শরীফ)
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) রসূলুল্লাহ (স) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন- আমার উম্মতের যে ব্যক্তি চল্লিশ হাদিস সংরক্ষণ করেছেন তিনিই হলেন আলেম। (কানযুল উম্মাল)
হযরত আবু মাসউদ (রা) রসূলুল্লাহ (স) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- আমার উম্মাতের যিনি এমন চল্লিশ হাদিস মুখস্ত করবেন যার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের কল্যাণ দান করবেন। তাঁকে বলা হবে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি তুমি প্রবেশ কর। (কানযুল উম্মাল)
ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেন, যে ব্যক্তি চল্লিশটি হাদিস শিখবে এবং আমার উম্মাতের নিকট পৌঁছে দিবে, কিয়ামতের দিন সে আমার শাফায়াত লাভ করবে কিংবা আমি তার জন্য সাক্ষী হবো। (জামি বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাদ্বলিহি) রাসূল (স) কারো জন্য শাফায়াত করলে কিংবা সাক্ষী হলে তার আর চিন্তা কিসের।
উল্লেখ্য হক্বপন্থী আলেমগণ হলেন রাসূল (স) এর প্রতিনিধি। তাঁদের মর্যাদা সাধারণ মানুষের মর্যাদার চেয়ে প্রায় ৭০টি ধাপ উপর। রাসূল (স) এর হাদিস মুবারক থেকে ৪০টি হাদিস মুখস্ত রাখা এবং অন্যের কাছে সেগুলো পৌঁছে দেয়ার পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ তায়ালা হাশরের দিন এ ধরনের মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদান দিবেন। (আল্লাহু আকবর)
চল্লিশটি হাদীস মুখস্ত করার গুরুত্বের উপর তের জন সাহাবা থেকে প্রায় শতাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন- আলী-বিন আবি তালিব, আবদুল্লাহ বিন মাসুদ, মুয়াজ বিন জাবাল, আবু দারদা, ইবনে উমার, ইবনে আব্বাস, আবু হুরায়রা এবং আবু সাঈদ খুদরী (রা)।