খিদমতে খালক তথা আর্তমানবতার সেবা
তাযকিয়া ফাউন্ডেশন গতানুগতিক কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে একদিকে ইসলামি শরিয়তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা, ইমান, আক্বিদা, আদব, এবং উন্নত আখলাক্ব গঠনের শিক্ষা দেয়া হয়; অপরদিকে একজন মানুষের অন্তরের ব্যাধিসমূহ দুর করে তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধতা অর্জনের মাধ্যমে বাস্তবিক জীবনে একজন সাচ্চা মুসলমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উদ্দেশ্যে তা'লীম ও তাওয়াজ্জুহ্ প্রদান করা হয়। এর পাশাপাশি, তাযকিয়া ফাউণ্ডেশন মানবসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে এর সদস্যদেরকে খিদ্মাতে খাল্ক্ব বা সৃষ্টির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার উৎসাহ প্রদান এবং প্র্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। যেমন, তাযকিয়া ফাউণ্ডেশনের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন দূর্যোগের সময় ত্রাণ বিতরণ এবং বাস্তুহারা ব্যক্তিদের পূনর্বাসনসহ বিভিন্ন ধরনের মানবসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়; ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে গরীব অসহায় মানুষদের উন্নত চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়; এবং ইয়াতীম শিশু লালন পালনে এবং গরীব বিধবা নারীদের কল্যাণে তাযকিয়া ফাউণ্ডেশন অনেক ধরনের কর্মসূচী পালন করে থাকে। ইসলাম হচ্ছে মানবতার সেবায় নিয়োজিত আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালার একমাত্র মনোনীত ধর্ম। একজন সত্যিকারের মুসলিম হচ্ছেন মানব, সমাজ, রাষ্ট্র এবং এই সমগ্র জাহানের সবচেয়ে বড় সেবক।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সেসকল বান্দাদেরকে ভালোবাসেন যাঁরা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকেন। যেমন, রাব্বুল 'আলামীন পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন,
-وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا - إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاء وَلَا شُكُورًا
অনুবাদঃ "তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।" (সুরা দাহর : আয়াত ৮-৯)
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ عَلَى مُسْلِمٍ سَتَرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ " .
অনুবাদঃ "যে লোক কোন মু’মিন ব্যক্তির দুনিয়াবী অসুবিধাগুলোর কোন একটি অসুবিধা দূর করে দেয়, তার পরকালের অসুবিধাগুলোর মধ্যে একটি অসুবিধা আল্লাহ তা‘আলা দূর করে দিবেন। কোন মুসলমান ব্যক্তির দোষ-ক্রুটি যে লোক গোপন রাখে, তার দোষ-ক্রুটি আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে গোপন রাখেন। যে পর্যন্ত বান্দাহ তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে সে পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তাকে সাহায্য করতে থাকেন।" [ জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৪২৫ ]
عَنْ أَبِي مُوسٰى الأَشْعَرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَطْعِمُوا الْجَائِعَ وَعُودُوا الْمَرِيضَ وَفُكُّوا الْعَانِيَ.
অনুবাদঃ "আবূ মূসা আশ’আরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা 'আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর।" [ সহীহ বুখারী - ৫৬৪৯ ]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي . قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ . قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي . قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ . قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي . قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ قَالَ اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي " .
অনুবাদঃ সায়্যিদুনা হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার খোজ-খবর রাখনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে আপনার খোজ-খবর করব, অথচ আপনি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে।
হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়োছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কি করে আপনাকে আহার করাতে পারি! আপনি তো সারা জাহানের প্রতিপালক। তিনি (আল্লাহ) বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে আহার চেয়েছিল? তুমি তাকে খেতে দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে আহার করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে।
হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কী করে আপনাকে পান করাব, অথচ আপনি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পান করাতে, তবে তা আমার কাছে পেতে।" [ সহীহ মুসলিম - ৬৩২২ ]
এভাবে পবিত্র কুরআন এবং হাদিস শরীফে অনেক জায়গায় ইসলামে মানব সেবার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং, একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলমান হিসেবে দাবী করতে চাইলে, মানসেবা কে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর, তাযকিয়া ফাউণ্ডেশনের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য যেহেতু আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রাসূল সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র সন্তুষ্টি অর্জন এবং পরকালীন মুক্তি লাভ, তাই অত্র প্রতিষ্ঠান মানসেবার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে থাকে।
আমাদের কার্যক্রমসমূহঃ