তিলাওয়াতুল কুরআন ও তা আমলের বাস্তবায়ন

মহাগ্রন্থ আল কুরআন আল্লাহ তা‘য়ালার পবিত্র বাণী যা লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত, যাবতীয় সন্দেহ ও সংশয় মুক্ত। আল্লাহ তা‘য়ালা আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে রসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর মানব জাতির হেদায়াতের জন্য সুদীর্ঘ ২৩ বছরে প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প অল্প করে এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এতে রয়েছে মানবজাতির প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা।।

কুরআন মাজিদ বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াতের প্রয়োজনীয়তাঃ

প্রতিটি মুসলিম নর-নারীকে অবশ্যই পবিত্র কুরআন বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করা শিখতে হবে। কেননা কুরআন শিক্ষা করা ফরজ। এ মর্মে আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, "আর আপনি কুরআন তিলাওয়াত করুন ধীরস্থির ও সুস্পষ্ট ভাবে।" (সূরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ৪)

বিশুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের প্রচেষ্টা আজীবন চালিয়ে যেতে হবে। নবী করিম ﷺ ইরশাদ করেছেন , "যারা শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথি হবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও পবিত্র কুরআন শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।" (আবু দাউদ )

বিশুদ্ধতার পাশাপাশি হাদিস শরিফে সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াতে উৎসাহিত করা হয়েছে। রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, "তোমরা সুললিত কণ্ঠে কুরআন শরিফ তিলাওয়াত কর, কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।' (শুআবুল ইমান )

তাজবিদ অনুযায়ী কুরআন শরিফ তিলাওয়াত বা পাঠ করার মধ্যে অশেষ ফজিলত ও বরকত রয়েছে। অপরদিকে কুরআন শরিফের একটি হরফও যদি অশুদ্ধভাবে পাঠ করা হয় তবে সওয়াবের পরিবর্তে গুণাহ এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী পর্যন্ত পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে।

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলতঃ

মহাগ্রন্থ আল কুরআন তিলাওয়াতে রয়েছে নানাবিধ কল্যাণ ও উপকারিতা। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন- "নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করে যা কখনো ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। কারণ আল্লাহ তাঁদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দিবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।" (সূরা ফাতির-২৯-৩০)

এ পৃথিবীতে পবিত্র কুরআন একমাত্র কিতাব যার তিলাওয়াতে প্রতিটি হরফে নেকি রয়েছে। এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন "যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করলো তার জন্য রয়েছে একটি নেকী। আর একটি নেকী দশ নেকীর সমতুল্য। মহানবী ﷺ বলেন, আমি বলছিনা যে “আলিফ লাম মিম” একটি হরফ বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ ও মিম একটি হরফ। (তিরমিজি)

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের অভ্যন্তরীণ পুতঃপবিত্রতা হাসিল হয়। মনের কালিমা ও কলুষতা দূর হয়, অন্তর আলোকিত হয়। হযরত ইবনু উমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই মানুষের অন্তরে মরিচা ধরে, যেমন লোহা পানির সংস্পর্শে আসলে মরিচা ধরে। সাহাবায়ে কিরাম রাসুল ﷺ এর কাছে এর প্রতিকার জানতে চাইলেন। মহানবী ﷺ বললেন, মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা ও বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। (বায়হাকী)

হযরত ওসমান ইবনু আফ্‌ফান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- "তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যিনি কুরআন মাজিদ নিজে শিক্ষা করেন এবং অন্যকে শিক্ষা দেন।"

হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- "যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে তার দৃষ্টান্ত কমলা লেবুর মত যা সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করেনা, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের ন্যায় যার ঘ্রাণ নেই কিন্তু মিষ্টি।"

হযরত আবু উমামা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি- "তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ কুরআনুল কারীম কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।"

দুনিয়া অর্জন ও সুনামের জন্য তিলাওয়াতকারীর পরিণতিঃ

কুরআন তিলাওয়াত নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সওয়াবের কাজ কিন্তু যারা পার্থিব জীবন-জীবিকা, সুনাম-সুখ্যাতি ও মানুষকে দেখানোর জন্য পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করবে পরকালে তাদের করুণ ও কঠিন পরিণতি বরণ করতে হবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন- "তোমরা যুব্বুল হুজুন থেকে আল্লাহ তা'য়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ যুব্বুল হুজুন কী? জবাবে মহানবী ﷺ বললেন, জাহান্নামের একটি গর্ত, যা থেকে জাহান্নাম নিজে প্রতিদিন আল্লাহ তা'য়ালার কাছে ৪০০ বার পানাহ চায়। মহানবী ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হলো সেখানে কারা প্রবেশ করবে? উত্তরে মহানবী  বললেন- ঐ সমস্ত কারীগণ যারা দুনিয়ার সুনাম-সুখ্যাতির জন্য কুরআন তিলাওয়াত করে।" (তিরমিজি)

মুমিন ও মুনাফিকের কুরআন তিলাওয়াতের পার্থক্যঃ

হযরত আবু মূসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে সে উতরুজ্জা ফলের মতো, যার স্বাদও ভালো ঘ্রাণও সুন্দর আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে খেজুরের মতো, যার স্বাদ ভালো তবে কোনো ঘ্রাণ নেই। আর যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে সে রায়হানা সুগন্ধির মতো, যার ঘ্রাণ মোহনীয় তবে স্বাদ তিক্ত, আর যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে না সে হানজালা ফলের মতো, যার স্বাদও তিক্ত আর ঘ্রাণও নেই। (বুখারী)

'হানজালা' তরমুজ জাতীয় একটি কমলা রঙের ফল যার ভেতরটা প্রচন্ড তিতা।

কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনের আবশ্যকতাঃ

পবিত্র কুরআন আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী; প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরয হচ্ছে আল্লাহর বাণীকে বুঝে কার্যত বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, "এটা এমন বরকতময় কিতাব যা আমি আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে তারা উহার আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং বিবেকবান ও চিন্তাশীল লোকজন তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।" (সূরা সোয়াদ-২৯)

আল্লাহ তা‘য়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন- "তারা কি কুরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না?" (সূরা নিসা-৮২)

যারা আল্লাহ পাকের কালামকে যথাযথ মর্যাদার সাথে তিলাওয়াত করে এবং এটিকে প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাদেরকে সুপারিশের ক্ষমতা প্রদান করবেন।হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি কুরআন পাঠ করে আত্মস্থ করে এবং এটি প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করে, এর হালালকে হালাল মনে করে এবং হারামকে হারাম মনে করে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাঁকে স্বীয় পরিবারের এমন দশজনকে সুপারিশের অধিকার দিবেন যাদের প্রত্যেকের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়েছিল। (আহমাদ, তিরমিজি)

অতএব সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কুরআনুল কারীম কেবল মৌখিকভাবে তিলাওয়াত করার বিষয়ই নয় বরং তার অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবন করে জীবনে বাস্তবায়ন করাই এর মূল উদ্দেশ্য।

আমাদের কার্যক্রমসমূহঃ

বিষয়ভিত্তিক সহীহ হাদিস মুখস্তকরণ এবং অর্থ জেনে আমলে বাস্তবায়ন ইসলামী আখলাক ভিত্তিক ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গঠন
  
ইসলাম নির্দেশিত নারীর অধিকার ও মর্যাদা বাস্তবায়নইসলামি উচ্চতর গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ বিষয়ভিত্তিক বই প্রকাশ
  
কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক দৈনন্দিন 'আমালিয়াতমাদক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে তাযকিয়া ফাউন্ডেশন
  
তরুণদের পথ প্রদর্শনে তাযকিয়া ফাউন্ডেশনআত্মশুদ্ধির লক্ষ্যে তা'লীম ও তাওয়াজ্জুহ্‌ প্রদান
  
খিদমতে খালক বা মানবতার সেবাইসলামের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিবস উপলক্ষে মাহফিলের আয়োজন

 

image
তাযকিয়া ফাউন্ডেশন একটি শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারমূলক অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। যা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে শুধুমাত্র আল্লাহ রব্বুল আ‘লামিনের সন্তুষ্টি এবং তাঁর প্রিয় হাবীব এর নৈকট্য অর্জন করার লক্ষ্যে পরিচালিত।

লাইভ মাহফিলসমূহ

পডক্যাস্ট

সচরাচর জিজ্ঞাসা

যোগাযোগ

ডোনেট

মাসায়িল

কমিউনিটি

ফটো গ্যালারী

সাবস্ক্রাইব করুন
mail-image

copywrite-image

Tazkia Foundation 2025

Terms and ConditionsReturn and RefundPrivacy Policy