ইমামুত ত্বরিকা

সাইয়্যিদ শাহসূফী আল-গাউস আল্লামা ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি ছিলেন আউলিয়া-ই-কিরামদের ইতিহাসে সর্বাধিক বিনয়ী, ইনসানে কামিল, আশেকে রাসূল ﷺ। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক সাধক, দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর গাউছের দায়িত্বপালনকারী, যিনি নবী করিম ﷺ এর হেরাগুহার ধ্যানের অনুকরণে একাধারে পনেরো বছর দুরূদে উম্মির মোরাকাবাকারী। তিনি ত্বরিকায়ে মদিনার জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম।

জন্ম ও পরিচিতি
arrow

ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর পিতার নাম মুহতারাম ওয়াজেদ মিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং মাতার নাম মুহতারামা মেহেরুন নেছা রহমাতুল্লাহি আলাইহা। দাদার নাম মুহতারাম আফিজ মজুমদার (হাঁড়ি মিয়া) রহমাতুল্লাহি আলাইহি, দাদির নাম মুহতারামা মারমী রহমাতুল্লাহি আলাইহা এবং নানা মুহতারাম মানিক রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন মিরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের মিরওয়ারিশপুর গ্রামে মজুমদার বাড়িতে ১৮৮৬ সালে ১৭ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর ছয় ভাইয়ের মাঝে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন।

শিক্ষাজীবন
arrow

ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি স্থানীয় একটি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। বেগমগঞ্জ থানাধীন সোনাপুরে অবস্থিত জুবলি স্কুলে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। এনট্রান্স (এসএসসি) পাস করার পর তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৪ সালে এইচএসসি সমমানের ফাইনাল আর্টস (এফ.এ) প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ‘পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়’ অধিভূক্ত কলকাতার শিয়ালদাহ এলাকায় অবস্থিত নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, (যার পূর্ব নাম ক্যাম্পবেল মেডিকেল কলেজ এবং শিয়ালদাহ মেডিকেল কলেজ) এ ভর্তি হয়ে সেখান থেকে এমবিবিএস সমমান ডিগ্রী অর্জন করেন।

কর্মজীবন
arrow

কলকাতা থেকে এমবিবিএস সমমান ডিগ্রী অর্জন করে তিনি তৎকালীন কুমিল্লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ সহকারী সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর মায়ের অসুস্থতার সংবাদ জানতে পেরে ছুটির দরখাস্ত করেন। সিভিল সার্জন তাঁর ছুটি মঞ্জুর না করায় তিনি চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়ে বাড়িতে চলে যান। পরবর্তীতে চৌমুহনী বাজারের পূর্ব পাশে একটি ফার্মেসী দিয়ে চেম্বার শুরু করেন। উক্ত চেম্বারে তিনি একাধারে ৬৭ বছর পর্যন্ত মানুষের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

পারিবারিক
arrow
জীবন

তিনি বেগমগঞ্জ থানার অন্তর্গত বানাবাড়িয়া গ্রামের আলীমুদ্দীন পাটওয়ারী বাড়ির জনাব মুহাম্মাদ ফাদ্বিল মিয়া এর কন্যা “আব্রুছের নেছা” এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর মহীয়সী স্ত্রীও একজন উচ্চস্তরের ওলী ছিলেন। যিনি ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)। পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে তার কবরের পূর্বপাশে ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে সমাহিত করা হয়।

সন্তান-
arrow
সন্তুতি

তিনি সাত ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। যাদের মধ্যে প্রথম পাঁচ ছেলেই শিশু অবস্থায় ইন্তিকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)। আর বাকি দুইজন হলেন মুহতারাম নূর মোহাম্মাদ মিয়া ও মুহতারাম মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান মিয়া। তিন মেয়ে হলেন: ১. মুহতারামা কুতুবুন নেছা, ২. মুহতারামা আকতাবে নেছা ও ৩. মুহতারামা তাজ পেয়ারা বেগম।মুহতারাম নূর মোহাম্মাদ মিয়া এর চারজন ছেলে এবং চারজন মেয়ে। যথাক্রমে: ১. মুহতারাম মোশাররফ হোসেন ২. মুহতারাম আব্দুল কাদির ৩. মুহতারাম মুহাম্মাদ তুহিন ৪. মুহতারাম মুহাম্মাদ মিহির ৫. মুহতারামা আমেনা বেগম ৬. মুহতারামা রাবেয়া বেগম ৭. মুহতারামা ফেরদৌসি ৮. মুহতারামা কুলসুম। মুহতারাম মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান মিয়া এর চার ছেলে এবং তিন মেয়ে। যথাক্রমে: ১. মুহতারাম মাওলানা শাহাদাত হোসেন ২. মুহতারাম হাফেজ মাওলানা আবু তাহের তারেক ৩. মুহতারাম আব্দুস সামাদ ৪. মুহতারাম আরিফুর রহমান ৫. মুহতারামা ফাতেমা আক্তার ৬. মুহতারামা নূরজাহান বেগম। ৭. মুহতারামা জোবায়দা খাতুন (জোবেদা), যিনি ৭ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)।মুহতারামা কুতুবুন নাহার এর চার ছেলে এবং দুই মেয়ে। যথাক্রমে: ১. মুহতারাম গোলাম কবির ভূঁইয়া (মিন্টু) ২. মুহতারাম ইঞ্জিনিয়ার মো: হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া (সেলিম) ৩. মুহতারাম জাহাঙ্গীর কবির ভূঁইয়া (মানু) ৪. মুহতারাম নুরুল কবির ভূঁইয়া (পিন্টু) ৫. মুহতারামা মনোয়ারা বেগম ৬. মুহতারামা মুবাশ্বেরা বেগম (রানী)।মুহতারামা আকতাবে নেছা এর এক ছেলে এবং ছয় মেয়ে। যথাক্রমে: ১. মুহতারাম মুহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন ২. মুহতারামা নূরজাহান কবির ৩. মুহতারামা সুরমা বেগম ৪. মুহতারামা কাজল বেগম ৫. মুহতারামা পুষ্প বেগম ৬. মুহতারামা কুসুম বেগম ৭. মুহতারামা রত্না বেগম।মুহতারামা তাজ পেয়ারা বেগম এর চার ছেলে এবং এক মেয়ে। যথাক্রমে: ১. মুহতারাম সাইফুল ইসলাম (আরজু) ২. মুহতারাম আমীর খসরু ৩. মুহতারাম আকরাম হোসেন মাসউদ ৪. মুহতারাম আনোয়ার হোসেন (রাসেল) ৫. মুহতারামা তাসলিমা বেগম।

আখলাক
arrow
মুবারক

০১. একনিষ্ঠতা: আল-গাউস আল্লামা ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর যাবতীয় কাজে অত্যন্ত একনিষ্ঠ ও আন্তরিক ছিলেন। বিশেষ করে ইবাদত বন্দেগী ও আধ্যাত্মিক সাধনার ক্ষেত্রে তাঁর একনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতা অত্যন্ত বিরল এবং তাঁর যুগে অকল্পনীয়।০২. ত্যাগ: ঢাকা, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ত্বরিকার কাজ সুচারুরূপে আঞ্জাম দিতে গিয়ে অকল্পনীয় ত্যাগ স্বীকার করেন। তিনি ত্বরিকা প্রচারের কাজে বৃদ্ধকালেও বিভিন্ন জায়গায় সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করতেন।০৩. বিনয়: তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। মাদরাসা শিক্ষার্থী এবং উলামা-ই-কিরামদের যথেষ্ট সম্মান ও মূল্যায়ন করতেন। বিভিন্ন মাহফিলে তিনি উলামায়ে কিরামদের নানাবিধ বিষয়ে আলোচনা করতে দিতেন। তিনি কখনো নিজেকে পীর হিসেবে পরিচয় দিতেন না।০৪. গোপনীয়তা: তিনি এত উচ্চস্তরের আল্লাহর ওলী হওয়া সত্বেও কখনো তাঁর কোন আচার-আচরণ, কথা বার্তা বা লেবাস পোশাকে তা প্রকাশ পেতে দেখা যায়নি।০৫. প্রচারবিমুখতা: তিনি সর্বদা প্রচার বিমুখ ছিলেন। তাঁর প্রধান শিষ্য ও খলিফা অধ্যাপক ড. সাইয়্যেদ আলী আশরাফ রহমাতুল্লাহ আলাইহি একবার তার জীবনী লেখার অনুমতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি বরং নিষেধ করেছেন। ০৬. বদান্যতা: বার্ষিক মাহফিলে আগত মেহমানদেরকে তিনি নিজ জমির উৎপাদিত চালের মাধ্যমে আপ্যায়ন করতেন। এছাড়াও তিনি আগত অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্নভাবে খেদমতের আঞ্জাম দিতেন। তাঁর ইন্তেকালের পর সুযোগ্য উত্তরসূরিরাও এই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ০৭. আতিথেয়তা: তিনি অত্যন্ত অতিথি পরায়ণ ছিলেন। তাঁর বাড়িতে কোন মেহমান আপ্যায়িত না হয়ে ফিরে যেতে পারতেন না। ০৮. মানবসেবা: তিনি এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি উভয় প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতিতে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও পারদর্শী ছিলেন। রোগীদেরকে তিনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন। এমনকি তিনি দূর্গম পথে (জমির আইল দিয়ে) সাইকেল চালিয়ে রোগীর বাড়িতে গিয়ে মানবসেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।০৯. ধৈর্য: তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের যাবতীয় সাধনায় তার প্রমাণ উপস্থাপন করে আমাদের জন্য আদর্শ রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘ পনের বছর দরূদে উম্মীর মোরাকাবা করেন।১০. ক্ষমা: তাঁর সামনে কেউ অনাকাঙ্খিত কাজ করলে তিনি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। কারো থেকে কখনো প্রতিশোধ নিতেন না।১১. অনাড়ম্বর জীবন যাপন: তিনি অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। তিনি চাকচিক্য ও বিলাসিতা মোটেই পছন্দ করতেন না। দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও মোহ-মায়া থেকে তিনি ছিলেন অনেক ঊর্ধ্বে।

আধ্যাত্মিক
arrow
সাধনা

আল-গাউস আল্লামা ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিন বছর আরাকানের জঙ্গলে ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় সকল আউলিয়া-ই-কিরামদের তাওয়াজ্জুহ প্রাপ্ত হয়ে আত্মিক উৎকর্ষতার চরম শিখরে উন্নিত হন। তিনি একাধারে পনের বছর দরূদে উম্মীর মোরাকাবা করেন, ত্রিশ বছর ইশার ওযু দিয়ে ফযরের নামায আদায় করেন এবং পঞ্চাশ বছর গাউছের দায়িত্ব পালন করেন।

১ম পীর: আম্বর ‘আলী শাহ (রহ.)

ইমামুত ত্বরিকাতের প্রথম শায়খ হচ্ছেন, কুমিল্লা জিলার মাজ্জুবপীর হিসেবে খ্যাত হযরত আম্বর ‘আলী শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। যার মাযার শরীফ কুমিল্লা জিলার চকবাজারের পূর্ব দিকে অবস্থিত।

২য় পীর: আবু বকর সিদ্দীকী ফুরফুরাভী (রহ.)

ইমামুত ত্বরিকাতের দ্বিতীয় শায়খ হচ্ছেন, ফুরফুরা শরীফের আ‘লা হযরত আবু বকর সিদ্দীকী ফুরফুরাভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি রূহানীভাবে ইমামুত ত্বরিকাতকে উচ্চ মাক্বামের ওলী হিসেবে জানতে পারেন। তাই তিনি দু’জন লোক পাঠিয়ে কোন এক মাহফিলে তাঁকে হুজুরের নিকট আসার জন্য দাওয়াত করেন।হুজুরের মাহফিল চলাকালীন অবস্থায় তিনি হাজির হলে সকলকে পথ করে দিতে বলেন এবং মঞ্চে নিজের কাছে বসান। তাঁর খলীফা ছারছীনা শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা নেছার উদ্দীন আহমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও চব্বিশ পরগনার বিশিষ্ট খলীফা মাওলানা মুহাম্মাদ রূহুল আমীন বশিরহাটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উপস্থিতিতে ত্বরিকাতের কাজ করার জন্য তাঁকে খেলাফত প্রদান করেন।

৩য় পীর: ‘আব্দুর রব জৌনপুরী (রহ.)

ইমামুত ত্বরিকাতের তৃতীয় পীর হলেন, জৌনপুর খান্দানের বিশিষ্ট বুজুর্গ হাফিজ আহমাদ জৌনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ছেলে ‘আব্দুর রব জৌনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনিও আল-গাউস আল্লামা ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে খেলাফত প্রদান করেন।

ত্বরিকার ইমাম
arrow
হিসেবে নিযুক্তি

ইমামুত ত্বরিকাত আল-গাউস আল্লামা ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি ছাত্র জীবনে কুমিল্লা শহরের নিকটে অবস্থিত জামানার কুতুব মাজ্জুব ওলী শায়েখ সূফী ‘আম্বর ‘আলী শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সাথে সাক্ষাত লাভ করেন। যিনি একদা রাত্রি বেলায় ইমামুত ত্বরিকাতকে এক লোকমা খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে ‘ইলমে বেলায়েতের এত্তেহাদী ফায়েয ও তাওয়াজ্জুহ প্রদান করেছিলেন। খাবার গ্রহণের পর ‘এশকে এলাহীতে নিমজ্জিত হয়ে মাজ্জুবী হালে বেহুশ হয়ে যান। শায়েখ ওনাকে ঐ অবস্থায় আরাকানের জঙ্গলে নিয়ে যান। সেখানে অনেক আওলিয়ায়ে কিরামগণের রূহানী সোহবাত ও ফায়েয লাভ করেন এবং ক্রমান্বয়ে ত্বরিকাতের উচ্চ শিখরে আরোহন করেন।এসময় তিনি হযরত খিজির ‘আলাইহিস সালামেরও সাক্ষাত লাভ করেন। বেহুশী অবস্থায় সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত করেন। পরবর্তীতে নিজের জন্মস্থানে এসে ত্রিশ বছর মোরাকাবা-মোজাহাদায় অতিবাহিত করেন। এসময় বিশেষভাবে একটানা ১৫ বছর যাবত দুরূদে উম্মী শরীফের মোরাকাবা করেন। যার ফলে আল্লাহ এবং রাসূল ﷺ এর নূরানী দীদার, সন্তুষ্টি ও কুরবাত হাসিল করেন। পরবর্তীকালে একদা খাজা খিজির ‘আলাইহিস সালামের মাধ্যমে রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ﷺ এর পক্ষ থেকে মাদীনা মুনাওয়ারা যিয়ারতের দাওয়াত লাভ করেন।ইমামুত ত্বরিকাত দাওয়াত প্রাপ্তির সাথে সাথে হজ্জ করার নিয়ত করেন। পরবর্তীতে আল্লাহর অনুগ্রহে হজ্জের খরচের ব্যবস্থা হয়ে যায়। হজ্জে বাইতুল্লাহর পর মদীনা শরীফ যিয়ারতের সৌভাগ্য লাভ করেন। মদীনায় অবস্থানকালীন একদা রাত্রিবেলায় আল্লাহর হাবীব ﷺ এর নূরানী দিদার লাভ করেন এবং এত্তেহাদী ওয়াইসি ফায়েয লাভ করেন। ফিতনার জামানায় উম্মতের নাজাত লাভের জন্য এত্তেহাদী তাওয়াজ্জুহ ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত সবকবিশিষ্ট ‘ইলমে বেলায়েতের পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তি সম্বলিত ত্বরিকা প্রাপ্ত হন।

হজ্জ ও উমরা
arrow
পালন

আল-গাউস আল্লামা ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি মোট ১০ বার হজ্জ এবং কয়েকবার উমরা পালন করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি সর্বপ্রথম হজ্জ পালন করেন।

কারামত
arrow

১. পেটের পীড়া থেকে মুক্তি ও সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত হওয়া: নোয়াখালি জেলার বেগমগঞ্জ থানার হাজিপুর নিবাসি সাবিত মিয়া রহমাতুল্লাহ আলাইহি পেটের কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে আল-গাউস ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর শরনাপন্ন হলে তিনি তাকে ঔষধের ব্যবস্থা না দিয়ে একগ্লাস পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করতে দেন। এতে সাবিত মিয়া পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং অলৌকিকভাবে তিনি সুরাতুল ফাতিহা থেকে শুরু করে অনবরত মুখস্থ কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকেন। উল্লেখ্য যে, এই ঘটনার পূর্বে সাবিত মিয়া কোন লেখাপড়া জানতেন না, এমনকি কুরআন তিলাওয়াত করতেও পারতেন না।

নসিহত
arrow
সমূহ

এক: এক আদেশ ও নির্দেশ০১. প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন বিশ্বাসের। ইমান খাঁটি হওয়ার প্রথম শর্ত মনে প্রাণে এই বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ্‌ এক, অনন্য, অতুলনীয়, শরীকহীন। তিনি নিজেকে যে ভাবে বর্ণনা করেছেন সেই বর্ণনাই তাঁর জন্য প্রযোজ্য। বুদ্ধি দ্বারা তাঁকে বোঝা যায় না, বাহ্যিক চক্ষু দ্বারা তাঁকে দেখা যায় না, তাঁর অস্তিত্ব কোন ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কখন? কিভাবে? কোথায়? এ সব প্রশ্ন তাঁর ক্ষেত্রে অবান্তর। সময়ের অতীত তিনি। সব কিছুর অস্তিত্বের মূলে তিনি। নিজের যাতের সঙ্গে তুনলীয় নয়। তাঁর নিজস্ব (গুণাবলি) ও তাই অন্য কোন কিছুর বা কারো গুণাবলির সঙ্গে তুলনীয় নয়। হাত, মুখ, দৃষ্টি, গতি, দর্শন, শ্রবণ, কথন, রূহ-যা কোরআন-হাদীসে বর্ণিত আছে আল্লাহ সম্পর্কে তাকে বিশ্বাস করা এবং বোঝা এবং সাক্ষ্য দেওয়া প্রত্যেক মুবাল্লেগের কর্তব্য।০২. কোরআন আল্লাহর আদি বানী, সৃষ্ট পদার্থ নয়।০৩. জান্নাতে আল্লাহর সঙ্গে স্পষ্ট সাক্ষাৎ হবে, হাদিসে বর্ণিত রুইয়াৎ-আল্লাহ সম্পর্কে প্রত্যেক মুবাল্লিগ সাক্ষ্যদান করবেন।০৪. বেহেশত, দোজখ, লওহে মাহ্‌ফুজ, কলম, হাউজে কাওসার, আরশ, কুরসী, পুলসিরাত, ওজনের বাটখারা, শিংগার হুষ্কার, গোর-আজাব, শাফায়াত, মনকির-নকির কর্তৃক সওয়াল-জওয়াব, আল্লাহর অনুমতিতে দোজখে নিক্ষিপ্ত লোকের জন্য শাফায়াত, জান্নাত এবং দোজখের চিরস্থায়িত্ব এবং কাফেরদের সেখানে চিরঅবস্থান এবং শিরক ব্যতীত মুসলমানদের অন্য সমস্ত গুনাই আল্লাহ এক সময় না এক সময় মাফ করবেন এবং দোজখ থেকে তাদের মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশাধিকার দিবেন-এ সবে বিশ্বাস করা এবং এ বিশ্বাস প্রচার করা প্রত্যেক মুবাল্লেগের কর্তব্য। যাঁদের এ সব সম্বন্ধে পূর্ণজ্ঞান এখনও হয়নি তারাও যেন দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করে রুহানী উন্নতির চেষ্টা করেন, ইনশাআল্লাহ তাঁরাও জ্ঞানচক্ষু দ্বারা দর্শন করে এ সমস্ত ব্যাপারে সাক্ষ্য দেওয়ার উপযুক্ততা অর্জন করবেন-মারেফাত হাসেল করবেন।০৫. নবী এবং রসূলগণ ফেরেশতাদের চাইতে উন্নত দরজার এবং তাঁদের মধ্যে মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং রসূলদের পরই ক্রমপর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ হচ্ছেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা), ওমর ফারুক (রা), ওসমান (রা) এবং আলী (রা) এঁদের পরই স্থান যে দশ জনের বেহেস্তবাস সম্বন্ধে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম খবর দিয়েছিলেন তাঁদের বাকী ছয়জন। তার পরিই আজওয়াজে মোতাহ্‌হারা, আহলে বায়েৎ, সাহাবী ও সাহাবীদের এবং তাদের অনুসারী তাবেয়ীদের, তাবেয়ীদের অনুসারী তাবে-তাবেয়ীদের এবং জাহেরী-বাতেনী জ্ঞানসম্পন্ন ওয়ীআল্লাহের।০৬. পূর্নজ্ঞানী হচ্ছেন তাঁরা যাঁদের আল্লাহ জাহেরী এবং বাতেনী উভয় ধরনের জ্ঞানের অধিকারী করেছেন। তারাই সত্যিকারের আলেম এবং সেই হিসেবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ওয়ারেশ অর্থাৎ উত্তরাধিকারী। তাঁরাই প্রকৃত ওয়ালী আল্লাহ্‌।০৭. বাতেনী জ্ঞান অর্জন করা সত্বেও পূর্ণ জাহেরী কেতাবী জ্ঞান অর্জিত যদি না হয়, তবু আল্লাহর ওলী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর উত্তরাধীকারী হতে পারেন যদি শরিয়তের মূল জ্ঞান তারা অর্জন করেন। প্রত্যেক মুবাল্লেগের জন্য তাই ফরজ কাজ হচ্ছে শরিয়তের মূল জ্ঞান অর্জন করা।০৮. জাহেরী এবং বাতেনী জ্ঞানসম্পন্ন লোকের শ্রেণিবিভাগ আল্লাহ করেছেন-সর্বোচ্চ শ্রেণিতে সিদ্দিক’ (সিদ্দিকীন) তারপর শহীদগণ (সুহাদা’আ) তারপর সালেহীন। সালেহীন দুই শ্রেণিভুক্ত-আরেফুন (যারা বাতেনী জ্ঞান অর্জন করেছেন) এবং মুবিদুন (যারা আল্লাহকে জানার এরাদা করে তরিকতের পথে অগ্রসর হয়েছেন)। আমি মুবাল্লেগীন কে ‘আরেফুন দলের মধ্যে শ্রেণিভুক্ত করি।০৯. প্রত্যেক মুবাল্লেগের কর্তব্য ইমান কে জবান দিয়ে ঘোষণা করা, হৃদয় থেকে বিশ্বাস করা এবং ইসলামের মূল আরকান পালন করা। যে ইমান ঘোষণা করতে চায় না বা পারে না সে কাফের। যে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস না করে ঘোষণা করে সে মোনাফেক। যে ইসলামের আরকান পালন করে না সে ফাসেক গুনাহ্‌গার এবং যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচার ব্যবহার আগ্রহ্য করে অন্যকিছু অনুসরণ করে সে বেদ্‌আতী।১০. নিজের আমলকে ইসলামের হুকুম আহ্‌কাম মোতাবেক করার জন্য প্রতিটি মুবাল্লেগের অবশ্য কর্তব্য সেগুলি জানা। ইমান, নামাজ, রোজা, হজ্ব এবং জাকাতের মূলনীতি জানা দরকার এবং সেই অনুযায়ী আমল করা অবশ্য প্রয়োজনীয়।১১. তাহারাত অর্থাৎ পাকসাফ থাকা সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন এবং যতদূর সাধ্য সর্বদা বা-অজু থাকার চেষ্টা করতে হবে।১২. চেহারা এবং পোষাক-আসাক সুন্নত-মোতাবেক হতে হবে। দাড়ি রাখতে হবে, গোঁফ ছোট করতে হবে, টাইট জামা-কাপড় পরিত্যাগ করতে হবে, পাজামা, কুর্তা বা লুংগী টাখনার উপর পর্যন্ত ঝুলবে। সিলক পরিধান করা নিষিদ্ধ। ধুমপান করাও নিষিদ্ধ।১৩. হালাল রুজী করা এবং হারাম রোজগার থেকে বিরত হওয়া অবশ্য কর্তব্য।১৪. হালাল খাওয়া এবং হারাম না খাওয়া এই নীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করতে হবে। হারাম খাদ্য রুহানী জ্যোতিকে বিনষ্ট করে। যদি ধর্ম প্রচারের খাতিরে, অবস্থার বিপাকে এবং নিজের অজ্ঞতার বশে হারাম খাদ্য ভক্ষণ করা হয় তা হলে মুবাল্লেগ নিজেই অবস্থা বুঝতে পারবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এস্তেগফার পড়তে হবে, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে হবে এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠাতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত মলিনতার পর্দা কলব থেকে বিদূরিত না হয়।১৫. যে কোন কাজ করবেন আল্লাহর রেজামন্দীর জন্য করবেন, নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়। মনে রাখতে হবে যে নিজের কোন কাজের জন্য মানুষ বেহেশত বা দোজখে যায় না, সেই কাজ কি নিয়তে করছে সেই জন্যই যায়। বোখারী শরিফের প্রথম হাদিসটি হল “ইন্নামাল আমাল বিন্নিয়াৎ” অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমল বা কর্ম নিয়ত বা উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে।১৬. তাই প্রত্যেক মুবাল্লেগের কর্তব্য নিজের নিয়তকে যাচাই করা এবং বোঝা যে, সে কতদূর পর্যন্ত আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসে বা আল্লাহর ওয়াস্তে ঘৃণা করে। (আল্‌ হুব্বে ফিল্লাহ্‌ এবং আল বোগ্‌যা ফিল্‌লাহ।)১৭. নিজের নিয়তকে যাচাই করে সৎকর্মের নির্দেশ এবং অসৎকর্ম থেকে দূরে থাকার উপেদেশ দান করতে হবে। (আল আমর বিল মা‘রূফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার।)১৮. ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপারে বাহসে (বাকযুদ্ধ বা দ্বন্দ্বে) লিপ্ত হবেন না। ১৯. প্রত্যেক মুবাল্লেগ কোরআন শরীফ বা তাজবীদ পড়বে এবং দৈনিক অন্ততঃ একরুকু পড়তে হবে।২০. মনে রাখতে হবে শরীয়ত ইসলামের ভিত্তি। এই শরীয়ত ব্যাখ্যাকারী উলেমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ শ্রেণির ফুকাহা ইচ্ছেন তাঁরা যাঁদের ব্যাখ্যা মুসলমান সমাজ গ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে চারজনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যাদের নামে চারটি মাজহাব প্রচলিত হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী। এসব মাজহাবের আইন কানুনের বৈষম্য নিয়ে তর্কবিতর্কে লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ। সবাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের আমলের বা বাণীর ব্যাখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই কোন মাজহাবকে অগ্রাহ্য করা বা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা বা বিরুদ্ধাচারণ করা আমাদের নীতিবিরুদ্ধ। এমন কি যদি কোন আলেম কোরআন হাদিসে অভিজ্ঞ হন এবং ছহিহ নিয়তে খালেস দিলে এবং শরীয়ত সম্পর্কে পূর্ণ অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যাখ্যা দান করেন তার সঙ্গেও বাকদন্দে লিপ্ত হবে না। সেই অভিজ্ঞ আলেমেরও কর্তব্য চারটি মাজহাবের যে কোন একটি মাজহাবের অনুসারে চলা। মুবাল্লেগীন যদিও যথেষ্ট উচ্চ জ্ঞানামর্গে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন তথাপি তাঁদের প্রতি নির্দেশ তাঁরা উপরুল্লিখিত যে কোন চার মাজহাবের একটিকে অবশ্যই অনুসরণ করবেন।২১. কোরআন, হাদিস এবং ফিকহ সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে হলে যাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ আলেম, জ্ঞান আহরণ করার জন্য তাদের নিকট যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। তবে সুফি আলেমের নিকট যাওয়া পছন্দ করি।২২. তাসাউউফ সম্পর্কে জানতে হলে সত্যিকারের জ্ঞানী সূফীর সঙ্গে কথা বলবেন। তবে প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য আমার সঙ্গে এবং আমার অবর্তমানে আমার প্রতিনিধি মদিনার জামাতের আমীর সৈয়দ আলী আশরাফের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আমীরে জামাতের নির্দেশ মতে অন্য কোন সুফীর সঙ্গেও আলোচনা করতে পারেন। তবে খ্যাতনামা ওলীআল্লাহর মাহফিলে যেয়ে তাদেরকে তাজিম জানানো এবং তাঁদের সোহবত হাসিল করাতে এবং দোয়া নিতে আমার আপত্তি নাই।২৩. তবে নিজের আভ্যন্তরীন অবস্থা, আহওয়াল এবং মোকামাত আরো ভাল করে বুঝতে হলে বা নিজের সুলুকের পথে কোন রকম বাধা বিপত্তি, বিভ্রম ও মলিনতার সম্মুখীন হলে এবং আমারে কাছে বা আলী আশরাফ সাহেবকে নিকটে না পেলে একজন মুবাল্লিগ অন্য যে কোন মুবাল্লেগ যাঁর প্রতি তাঁর বিশ্বাস এবং ভক্তি আছে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন তাঁর সাহায্য নিতে পারেন বা তাঁর সঙ্গে মোরাকাবায় বসতে পারেন। প্রতিটি মুবাল্লেগের প্রতি তাই নির্দেশ রইল তাঁর ভাই অন্য মুবাল্লেগ বিপদে পড়লে বা তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করলে তাঁকে যেন অবিলম্বে সাহায্য করেন।২৪. নাফ্‌স দমন, নাফসের বিরুদ্ধাচরণ, কুরিপু জয়, রুহানী তরক্বী অর্জন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর কৃপাদৃষ্টি এবং স্নেহলাভ এই হচ্ছে মুবাল্লেগীনের লক্ষ্য। তজ্জন্য তাদের কথা-বার্তা, দৃষ্টি, শ্রবণ, চলন, পোষাক পরিধান পদ্ধতি পরস্পরের প্রতি ব্যবহার, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা, সমপর্যায়ের লোকের প্রতি প্রীতি, ছোটদের প্রতি দয়াদাক্ষিণ্য এবং সকলের প্রতি খেদমত-এই নীতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানা অবশ্য কর্তব্য এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের আদব-কায়দা ঠিক করা প্রয়োজন। এই জন্য মাওলানা আশরাফ আলী থানভী সাহেবের “বেহেশতি জেওর” পাঠ করা জরুরি মনে করি। হযরত গওসুল আযম আব্দুল কাদের জীলানী (র:) এর ‘গুনিয়াতুত্তালেবীন’ (উভয় খণ্ড) পাঠ করাও প্রয়োজন। যারা আরবী, ফারসী বা ইংরেজী জানেন তাঁরা হযরত শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর “কিতাব আদব-আল মুরীদীন” বইটি অবশ্যই পাঠ করবেন। যারা উর্দু জানেন তাঁরা মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসূফ ইসলামী সাহেব কর্তৃক লিখিত “আদাবে জিন্দিগী” অবশ্যই পাঠ করবেন এবং তদানুযায়ী নিজেদের আচার ব্যবহার দুরস্ত করে নিতে চেষ্টা করবেন।২৫. মুবাল্লেগীন তরিকত-পন্থী। রুহানী তরক্বী যেহেতু তাদের জন্য জরুরী তাদের জন্য প্রয়োজন নিম্নলিখিত পুস্তক পড়া এবং এ পথে চলতে হলে নিজেকে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় তা জানা। বড়পীর সাহেবের “গুনিয়াতেত্তালেবীনের” (২য় খণ্ড) শেষাংশে এ সম্পর্কে মূলগত কিছু আলোচনা রয়েছে। তা পাঠ করা দরকার। মাওলানা হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজের মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর “জিয়াউল কুলূব” পুস্তক, মাওলানা মোহাম্মাদ আবদুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর “আনিসুত্তালেবীন” (পঞ্চম খণ্ড), মৌলবী মোহাম্মাদ আবদূল করীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর “এরশাদে খালেকীয়া”, মাওলানা কেরামত আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ‘যাদুত্তাক্‌ওয়া’ এবং ‘নূরন আল নূর’ এবং বড়পীর সাহেবের “ফতুহুল গায়েব” এ ব্যাপারে সাহায্য করবে। তবে সুলুক যা আমি শিক্ষা দিয়েছি তা অনুসরন করে প্রধানতঃ “আনিসুত্তালেবীন” এবং ছেরাজুস সালেকীন থেকে নিয়ম কানুন শিক্ষা করতে পারেন। দুই: কয়েকটি জরুরী হেদায়েত২৬. প্রত্যেক মুবাল্লেগ ফজরের নামাজের পর এবং সূর্য্যোদয়ের পর যখন আকাশের লালীমাভা দূর হয় তখন দুই রাকাত এশরাকের নামাজ এবং দুই রাকাত এস্তেখারার নামাজ পড়বেন। এশরাকের নামাজে প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর পাঁচবার সূরা ইখলাস বিসমিল্লাহর সহিত পড়বেন। এস্তেখারার নামাজে সূরা ফাতিহার পর প্রথম রাকাতে সূরা কাফেরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ এক বার করে পড়বেন। সালাম ফিরানোর পর এস্তেখারার দোয়া দ্বারা মোনাজাত করবেন।২৭. শেষরাতে তাহাজ্জোদের দুই দুই রাকাত করে ১২ রাকাত নামাজ পড়া বিশেষভাবে জরুরী। কোন কারণ বশতঃ যদি ঘুম ভাঙতে দেরী হয়ে যায় তাহলে চেষ্টা করতে হবে যেন কমপক্ষে চার রাকাত নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়। সাধারণতঃ যে কোন সূরা দিয়েই পড়া সম্ভব। তবে বড়পীর সাহেবের নিয়ম অনুযায়ী পড়তে পারেন। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার সূরা ইখলাছ দ্বিতীয় রাকাতে দুইবার এইভাবে বৃদ্ধিকরতঃ দ্বাদশ রাকাতে ১২ বার পড়তে হবে। তারপর বেতেরের নামাজ পড়তে হবে।২৮. প্রত্যেক মুবাল্লেগ যেন মাগরীবের নামাজের পর দুই দুই রাকাত করে ছয় রাকাত ছালাতুল আউয়াবীন পড়েন। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পর তিনবার সূরা ইখলাছ পড়তে হবে। জামাতে উপস্থিত থাকা কালীন আমীরের নির্দেশ ব্যতিত আওয়াবীনের নামাজ পড়া উচিত নয়।২৯. প্রতিদিন কমপক্ষে ফজরের এবং মাগরিবের নামাজের পর হাদিয়া এবং ছওয়াব রেছানী করতে হবে। যে নিয়ম শিক্ষা দিয়েছি এ সম্বন্ধে তা মাওলানা মনছুর সাহেব ছোট একটি পুস্তিকায় প্রকাশ করেছেন। প্রত্যেক মুবাল্লেগকে তা দেওয়া হল। যিনি পাঁচ ওয়াক্তেই এই হাদিয়া এবং সওয়াব রেছানী করতে পারবেন তিনি বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।৩০. রুহানী তরক্বীর জন্য প্রত্যেক মুবাল্লেগকে বিশেষ ভাবে বলছি তাঁরা যেন প্রত্যহ প্রচুর পরিমাণে এস্তেগফার এবং দরুদ পড়েন এবং নিয়মিত ভাবে মোরাকাবা করেন।

খুলাফা-ই-
arrow
কিরাম:

সাইয়্যিদ শাহসূফী আল-গাউস আল্লামা ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি তাঁর একনিষ্ঠ সালেক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. সাইয়্যেদ ‘আলী আশরাফ রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে মদীনার জামাতের আমীর নিযুক্ত করেন। অতঃপর ১৯৮৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সর্বমোট ২৯ জনকে খিলাফত প্রদান করা হয়। যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ত্বরিকাতের খিদমাতের আঞ্জাম দিয়ে অনেকেই পরলোক গমন করেছেন। তাঁদের খুলাফাগণ পরবর্তীতে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ত্বরিকাতের কাজ করে যাচ্ছেন।০১. জনাব নূর মোহাম্মদ, পিতা-ওলীয়ে কামেল আলহাজ্ব জনাব ডাক্তার বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
০২. মোহাঃ শাহজাহান, পিতা- ওলীয়ে কামেল আলহাজ্ব জনাব ডাক্তার বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
০৩. মাওলানা মোহাঃ মোস্তফা, পিতা- মৃত মৌলভী আব্দুল খালেক, মীরওয়ারিশপুর, নোয়াখালী।
০৪. মোঃ শামছুল হুদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, পিতা- জয়নাল আবেদীন, মীরওয়ারিশপুর, নোয়াখালী।
০৫. মোহাঃ নুরুল ইসলাম, পিতা- মৃত আব্দুল সোবহান, মীরওয়ারিশপুর, নোয়াখালী।
০৬. মোহাঃ মমিনুল হক, পাঁচবাড়ীয়া, নোয়াখালী।
০৭. মোহাঃ জাহাঙ্গীর কবীর ভূঁইয়া, পিতা- বাশারাত উল্লাহ ভূঁইয়া, নোয়াখালী।
০৮. মোহাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, চন্দ্রগঞ্জ, নোয়াখালী।
০৯. মোহাঃ লোকমান হোসেন রহমাতুল্লাহি আলাইহি, সেবারহাট, নোয়াখালী।
১০. মোহাঃ তাজুল ইসলাম, পিতা-মৃত আব্দুল লতিফ, কড়িহাটী, নোয়াখালী।
১১. মোহাঃ আব্দুল আলীম মাস্টার রহমাতুল্লাহি আলাইহি, কান্দিরপার, কুমিল্লা।
১২. মোহাঃ মাজেদুল ইমলাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি (প্রফেসর), কুমিল্লা।
১৩. মোহাঃ ফজলুল করিম (মোহাদ্দেছ), ধামতি, কুমিল্লা।
১৪. মাওলানা জয়নাল আবেদীন সাহেব, কুমিল্লা।
১৫. মাওলানা আব্দুল রশীদ, চাঁদপুর।
১৬. মোহাঃ হাবিবুর রহমান খন্দকার, মুরাদনগর, কুমিল্লা।
১৭. মোহাঃ মোখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি সোন্দ্রম, কুমিল্লা।
১৮. প্রফেসর মোহাঃ জামাল উদ্দিন, বাতাকান্দি, কুমিল্লা।
১৯. মোহাঃ কমরুদ্দিন আহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ডি.জি.এম (পোষ্টাল), ঢাকা।
২০. জনাব সৈয়দ আলী নকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (প্রফেসর), ঢাকা।
২১. মোহাঃ মোস্তফা কেরানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, নাটেশ্বর, নোয়াখালী।
২২. হাফেজ মোহাঃ দাইয়ান, চৌমুহনী, নোয়াখালী।
২৩. মোহাঃ রইস উদ্দিন আহমদ, চৌমুহনী, নোয়াখালী।
২৪. মাওলানা রশীদ আহমদ, কুমিল্লা।
২৫. শেখ মোহাঃ রুস্তম আলী, মিরপুর, ঢাকা।
২৬. মোহাঃ আব্দুল ওহাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি (খুলনা), নোয়াখালী।
২৭. মাওলানা মোহাঃ আবুল কাশেম, দুর্গাপুর, নোয়াখালী।

ওফাত
arrow

ইমামুত ত্বরিকা আল-গাউস আল্লামা ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহ আলাইহি ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৩ ‘ঈসায়ী; ১৭ জিলহজ্জ, ১৪০৩ হিজরীতে প্রায় ৯৮ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে অসংখ্য ভক্তবৃন্দকে শোক সাগরে ভাসিয়ে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্তজীবনে প্রস্থান করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।শেষকথা: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই ক্ষণজন্মা মহান সাধকের রেখে যাওয়া অসাধারণ কীর্তি ও মহান চরিত্র মাধুর্য এবং তাঁর ত্বরিকার যাবতীয় নেয়ামতের মাধ্যমে আমাদেরকে উভয় জাহানে উপকৃত করুন, আমীন।
একনজরে
  • নাম
    সাইয়্যিদ শাহসূফী আল্লামা ডাক্তার মুহাম্মাদ বদিউজ্জামান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
  • পিতা
    মুহতারাম ওয়াজেদ মিয়া (র)
  • মাতা
    মুহতারামা মেহেরুন নেছা (র)
  • জন্ম
    ১৭ জানুয়ারি ১৮৮৬
  • জন্মস্থান
    মিরওয়ারিশপুর, বেগমগঞ্জ নোয়াখালী, বাংলাদেশ
  • শিক্ষা
    এমবিবিএস সমমান
    নীলরতন সরকার মেডি. কলেজ
    কলকাতা, ভারত
  • পেশা 
    ডাক্তার
  • প্রতিষ্ঠাতা ইমাম
    ত্বরিকায়ে মদীনার জামা‘য়াত
  • ওফাত
    ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৩
  • মাজার শরীফ
    মজুমদার বাড়ি, মিরওয়ারিশপুর বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী
image
তাযকিয়া ফাউন্ডেশন একটি শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারমূলক অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। যা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে শুধুমাত্র আল্লাহ রব্বুল আ‘লামিনের সন্তুষ্টি এবং তাঁর প্রিয় হাবীব এর নৈকট্য অর্জন করার লক্ষ্যে পরিচালিত।

লাইভ মাহফিলসমূহ

পডক্যাস্ট

সচরাচর জিজ্ঞাসা

যোগাযোগ

ডোনেট

মাসায়িল

কমিউনিটি

ফটো গ্যালারী

সাবস্ক্রাইব করুন
mail-image

copywrite-image

Tazkia Foundation 2024

Terms and ConditionsReturn and RefundPrivacy Policy